শিরোনাম |
❒ ভোক্তা মহলের অভিযোগ সবজির বাজারেও গড়ে উঠেছে সিণ্ডিকেট
গেল বছর কয়েক মরিচ চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন চাষী। যেকারণে মেহেরপুরের গাংনীসহ আশপাশের এলাকায় চলতি বছরে বেড়েছে মরিচ চাষ। হঠাৎ করে তবে মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। এতেই হতাশ চাষিরা। সোমবার যে মরিচের দাম ছিল কেজি প্রতি ১৮০-১৯০ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকা কমে আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। তবে যশোরের বাজারে আজও জাত ভেদে ২শ থেকে ২শ’ ৪০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
একাধিক মরিচ চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচ চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কারণ চারা রোপণের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে গাছে মরিচ আসতে শুরু করে। দ্রুত গাছ থেকে মরিচ তোলা যায়। তাছাড়া মরিচের মধ্যে অনেক চাষি সাথি ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলও আবাদ করেন।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ চাষের জন্য খরচ হয় প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা। অনুকূল আবহাওয়া ও ফলন ভালো হলে বেশ লাভ হয়। দাম অল্প সময়ে যে পরিমাণ লাভ হয় তা অন্য কোনো ফসলের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। আর এই মরিচ কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসেন। বাজার থেকে অথবা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান তাঁরা। তবে তাঁরা ভাবতে পারেননি মরিচের দাম এত কমে যাবে। দাম না বাড়লে লাভ হবে না।
করমদী গ্রামের মরিচ চাষি আসমাউল ইসলাম বলেন, বাজারে ৩০ কেজি মরিচ এনেছিলাম। মরিচ ৫০০ গ্রাম কেটে নিয়েছে। খাজনা দিলাম কেজি প্রতি ১ টাকা। মরিচ তোলা খরচ কেজিপ্রতি দিতে হয় ১৫ টাকা। তিন-চার দিন যে পরিমাণ বৃষ্টি হলো গাছ নড়ে গেছে, হয়তোবা রোদ বের হলে মারা যাবে। গাছ মারা গেলে লোকসান বেশি হবে।
দেবীপুর গ্রামের মরিচ চাষি ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা প্রতি বছরই মরিচের আবাদ করি। ভালো লাভ হয়। অল্প সময়ে ভালো লাভের জন্য মরিচের চাষ প্রতি বছর বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো লাভ হয়। প্রথমে গাছে মরিচ এসেছিল না। প্রথমে যেভাবে দাম পেয়েছিলাম তাতে আশা করেছিলাম এবার ভালো লাভ হবে। কিন্তু হঠাৎ আজ মরিচের দাম একেবারে তলানিতে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি। আজ বিক্রয় হলো মাত্র ৭০ টাকা কেজি।
গত কালকের চেয়ে আজ মরিচের বাজার খুবই খারাপ। গতকালকেও ছিল মরিচ ১৮০-১৯০ টাকা কেজি। আর আজ নেমে হয়ে গেল ৭০ টাকা কেজি। একদিনের ব্যবধানে ১২০ টাকা কেজিতে কমেছে। বলেন, করমদি গ্রামের মরিচ চাষি আমিরুল ইসলাম।
গতকাল মরিচের ভালো দাম পেয়েছিলাম। আজকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হলো। একদিনের ব্যবধানে মরিচের দাম এত কমে যাবে তা ভাবতে পারিনি। যে পরিমাণ বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া হয়েছে তাতে মরিচের গাছ মারা যাওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। আর গাছ মারা গেলে ব্যাপক লোকসান হবে চাষির। বলেন, দেবীপুর গ্রামের মরিচ চাষি লিটন আলী।
এদিকে দেবীপুর বাজারের মরিচ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল মরিচ ১৮০-১৯০ টাকা ছিল। আজ মরিচ মাত্র ৭০ টাকা কেজি বিক্রয় হয়েছে। প্রচুর সরবরাহ থাকায় মরিচের দাম কমেছে। আমরা যখন মরিচ ক্রয় করি তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে মণ প্রতি ২ কেজি করে কেটে রাখি ঢলন হিসেবে।
দেবীপুর হাট ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ হাটে প্রতিদিন ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার কেজি মরিচ সরবরাহ হয়। প্রথমে মরিচ একেবারে কম উঠত, তবে দাম ছিল চড়া। আর এখন মরিচ অনেক সরবরাহ হয় তারপরও দাম ভালো আছে। আজকে মরিচের দাম কম। ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। গত বছর ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছিল। এ বছর মরিচ চাষ বেড়েছে। মরিচ চাষ লাভ জনক হওয়ায় অনেকেই মরিচ চাষ করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, উপজেলায় এবার মরিচের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। মরিচ চাষে লাভবান হওয়ায় অনেক চাষি মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকেছে। অনুকূল আবহাওয়া আর মরিচের দাম ভালো থাকলে আশা করছি চাষিরা লাভবান হবে।
যশোর বড়বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন-সরবরাহ কম, তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এনিয়ে ভোক্তা মহলের অভিযোগ সবজি বাজারেও সিণ্ডকেট গড়ে উঠেছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে-যশোর বড় বাজারে দিনে-রাতে অন্তত ৩ বার দাম উঠা-নামা করে। ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে এটা হয়। যদিও বিক্রেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।