শিরোনাম |
❒ যশোর পূজা পরিষদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি জবর দখলের অভিযোগ
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের শীর্ষ দুই নেতার অনিয়ম-দুর্নীতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার নামে রক্তচুষার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সংগঠনটির সিংহভাগ নেতৃবৃন্দ। এ কাজে একাট্টা হয়েছেন জেলার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ। অভিযুক্তরা টানা সময় সনাতন সম্প্রদায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বদলেছেন নিজেদের ভাগ্য। সনাতনীদের কেউ বিপদে পড়লে তাকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলে নিজেদের ডেরায় ঢুকিয়ে বিপাকে ফেলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক পন্থায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে এবার যাত্রা শুরু করলো ‘বৈষম্যবিরোধী সনাতন সমাজ’ নামে একটি সংগঠন।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ পূজা উদযাপন পরিষদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অজানা নানা তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, বিতর্কিত দুই নেতা কতিপয় সহযোগীর সহায়তায় মুড়লি জোড়া শিব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, লালদিঘির পাড়ের হরিসভা মন্দির, নীলগঞ্জ মহাশ্মশান ও রাজারহাট শ্মশানের বৈধ কমিটি ভেঙে দিয়ে পকেট কমিটি বানিয়ে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এসবের বিরোধীতা করায় বৈধ কমিটির নেতাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুলিশ দিয়ে হয়রানি পর্যন্ত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পূজা পরিষদের সাবেক নেতা মৃনাল কান্তি দে বলেন, তাদের সাথে থেকে দেখেছি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ব্যক্তিস্বার্থে সবকিছু করেন। সনাতনীদের বিপদে পাশে থাকার পরিবর্তে কিভাবে রক্ত চুষে নিজেদের ভাগ্য বদল করা যায়-তা দক্ষতার সাথে করে আসছেন। একজন বিবেক সম্পন্ন মানুষ হিসেবে এসব মেনে নিতে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে আসছিলাম। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড আর মেনে নেয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন-এখন থেকে জেলার পূজা-পার্বন উদযাপন থেকে শুরু করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপদে-আপদে পাশে থাকবে ‘বৈষম্যবিরোধী সনাতন সমাজ’। তিনি পূজা উদযাপন পরিষদের দুর্নীতিগ্রস্তদের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে ‘বৈষম্যবিরোধী সনাতন সমাজ’ সংগঠনের সাথে যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
এ সময় পূজা পরিষদ ত্যাগ করে নতুন সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী সনাতন সমাজ’র নেতৃবৃন্দ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-আহবায়ক মৃনাল কান্তি দে, সদস্য সচিব অধ্যাপক অখিল চক্রবর্তী, সদস্য অশোক কুমার ঘোষ, সুজিৎ কাপুড়িয়া, অধ্যাপক গোপীকান্ত সরকার, অধ্যাপক সুনীল কুণ্ডু, অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র রায়, বিষ্ণুপদ সাহা, অমল অধিকারী, অনুপমা মিত্র, পরিমল মজুমদার প্রমুখ।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সভাপতি সুজিৎ কাপুড়িয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে তাকে নাজেহাল করা হয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে কালী মন্দির সংস্কার করার নামে ৫ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন আদালতে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন-বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। সবকিছুতে মেয়াদোত্তীর্ণ পূজা উদযাপন পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা জড়িত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মৃনাল কান্তি দে বলেন, তিনি পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাকে চাপ প্রয়োগ করে বসিয়ে দেন। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন-আওয়ামী লীগ আমলে লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে দুর্গাপূজায় সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাত করেছেন। পারিবারিক পূজা মন্ডপের নামে সরকারি অনুদান নিয়ে হজম করেছেন। সরকারি অনুদানের চাল বিক্রি করে পরিদর্শনের নামে বিভিন্ন অংকের টাকা কেটে নিয়ে আত্মসাত করেছেন। এরবাইরে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন বিপদে পড়লে তাদের রক্ষার পরিবর্তে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এখন প্রতিবাদ করার সময় এসেছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন-সনাতনীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ মন্দির-শ্মশানসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ‘বৈষম্যবিরোধী সনাতন সমাজ’ নামে এই সংগঠনটি করা হয়েছে। এখন থেকে জেলা প্রশাসন শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার সাথে নতুন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করবে। আসন্ন দুর্গাপূজায় স্ব স্ব মন্দির কমিটির কাছে সরকারি অনুদানের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।