শিরোনাম |
❒ বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রথম বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘আমরা জানি, বিগত দেড় দশকে জাতি হিসেবে আমাদের অর্জনের ঝুলি বিভিন্ন মাত্রায় সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে স্বীকার করতে হবে, দুর্নীতির মতো অতল বিস্তৃত ব্যাধি থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উজ্জ্বল অর্জনগুলো দুর্নীতির অন্ধকারে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ দুর্নীতি আমাদের জন্য একদিকে যেমন কলঙ্কের, অপমানের তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।’
‘দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ-গঠন সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রথম বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘কেবল আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না, দুর্নীতিরও হয় না। এর জন্য দরকার সচেতনতা, সামাজিক আন্দোলন। দুর্নীতিবাজ পিতাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে, বয়কট করা না হলে কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না, এ রোগের উপশম হবে না। বিত্তের প্রদর্শনী এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতার বিষয়। অবৈধ অর্থে ভোগবিলাস এখন ফ্যাশন। কেউ জানতে চাচ্ছে না এ অর্থের উৎস কি? উল্টো অনেকে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে, ভাবছে-এ অর্থ, এ চাকচিক্য যদি আমার হতো! দুর্নীতি আমাদের লজ্জাবোধকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, সততার অহংকারকে অর্থহীন করে দিয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান শিক্ষারহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতিও। এ ত্রুটি শিক্ষার নয়, এ ত্রুটি আমাদের শিখন প্রক্রিয়ায়। শিক্ষার প্রতি আমাদের মনোভাবের। শিক্ষা যদি হয় কেবল চাকরি পাওয়ার উপকরণ, উপার্জনের হাতিয়ার। শিক্ষা যদি হয় অন্যের অধিকার হরণের অনুঘটক। তাহলে সেটা শিক্ষা নয়, শিক্ষার নামে প্রহসন। দুঃখের বিষয়, আমাদের তরুণসমাজের একটা বিরাট অংশের মাঝে আমরা এখনো শিক্ষার সঠিক বোধ সঞ্চারিত করতে পারিনি। সততার মুকুট নিয়ে বেঁচে থাকা শেখাতে পারিনি। অল্পে তুষ্ট থেকে সাধারণ জীবন যাপনের মাহাত্ম্য শেখাতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতায় আইনের কঠোর প্রয়োগ সময়ের দাবি। গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে জবাবদিহি। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পরিচালনা কাঠামো গড়ে তোলা হলে দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।