শিরোনাম |
❒ বাতাস ছড়াচ্ছে আগুনের হল্কা,জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা
❒ প্রকৃতির প্রতিশোধ নেয়া শুরু;জনমনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে
যশোরে গত দুদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শনিবার (২৯ মার্চ) যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস বিকেলে ৪টার দিকে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। শুক্রবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিনে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা দুটিতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। এরফলে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। বিশেষ প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করলেও সে সংখ্যা খুবই কম। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত শহর ঘুরে দেখা গেছে জনমানুষের চলাচল একদমই কম। সারা শহর যেন ফাঁকা।
যশোরাঞ্চলে এতদিন জুনের দিকে তাপদাহ চরমে ওঠার রেকর্ড আছে। তবে এবার মার্চেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে জেলাটিতে। এরফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রাণীকূলেও নাভিশ্বাস পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কাছিয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তে জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসের দোকানে কেনাকাটার ধুম পড়বে-এমনটিই প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায়ীদের কিন্তু হঠাৎ তাপমাত্রার পারদ অসহনীয় পর্যায়ে ওঠায় সেই প্রত্যাশার মুখে ছাই পড়েছে। তবে সন্ধ্যার পর কিছু মানুষ কেনাকাটা করতে আসছেন-এমনটিই জানিয়েছেন কসমেটিক্স বিক্রেতা আরিফ। তিনি বলেন-সন্ধ্যার পর যারা আসছেন, তারা শহরের বাসিন্দা। শহরতলী ও গ্রামাঞ্চল থেকে যেসব ক্রেতা আসতেন অতীতে, এবার তাদের দেখা নেই।
অন্যদিকে, প্রখর খরা আর ভ্যাপসা তাপমাত্রার কারণে রিকশা-ইজিবাইক চালক ও অন্যান্য যানবাহনের চলাচল অনেকাংশে কমে গেছে। এরফলে ঈদের কেনাকাটা করা এসব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা গেছে প্রাণিকুলে। এ আবহাওয়া কয়েকদিন অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে যশোরে এসে রিকশা চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেন আব্দুল গফ্ফার। তিনি বলেন, প্রতি ঈদের একমাস আগে যশোরে এসে রিকশা চালিয়ে ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি যাই কিন্তু এবার মনে হচ্ছে হবে। বাতাসে আগুনের হল্কা অনুভুত হচ্ছে। পিচের তাপের আঁচ মুখে লাগছে; মনে হচ্ছে মুখ পুড়ে যাচ্ছে।
মুজিব সড়ক এলাকার ভিআইপি মার্কেটের নজরুল ইসলাম ও কালেক্টরেট মসজিদ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আবু জাহেল বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি একেবারেই কম। বেচাকেনা নেই বলা চলে। গত কয়েক দিন তাপদাহ বাড়ছেই। ফলে এবার প্রত্যাশিত বেচাবিক্রি হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
চলমান তাপপ্রবাহে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষও। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা মাথায় টুপি অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। গরমের হাত থেকে শরীরকে শীতল করে জুড়িয়ে নিতে শহর থেকে কিশোর-যুবকেরা দল বেঁধে ছুটছে গ্রামাঞ্চলে নলকূপগুলোতে গোসল করতে।
এদিকে সাধারণ মধ্যে এপ্রিলে তীব্র তাপদাহ বয়ে যায় যশোরে। তবে এবার মার্চেই যশোরে অব্যহত তাপদাহে জনমনে অস্বস্তি ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। সচেতন মহল বলছে, সাধারণ মার্চে তেমন একটা তাপদাহ বিরাজ করে না। তবে এবার আগেভাগে তাপদাহ শুরু হওয়াতে প্রাণীকূলকে আরও ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়-সেখানে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রখর রোদ্রে মানুষ বাইরে বের হতে পারছেন না। মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে জেলাটিতে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ জুনে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ১৯৭২ সালে ১৮ মে। সেদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিলো ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।