শিরোনাম |
❒ সদুত্তোর মিলছে না!
যশোরে আড়াই লক্ষাধিক শিশুশিক্ষার্থীর করোনার টিকা দেয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক মহল। এসব শিশুর অভিভাবকরা ‘শিশুর সুরক্ষা অ্যাপে ঢুকতে পারছেন না। প্রাথমিক, দাখিল মাদ্রাসা, কওমি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্বই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘শিশুর সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুই হয়নি সিংহভাগ শিক্ষালয়ে। মৌখিকভাবে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার কথা বলা হলেও অধিকাংশ অভিভাবক অ্যাপে ঢুকে নিবন্ধন করতে পারছেন না। দিশেহারা হয়ে তাঁরা ছুটছেন স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু আমলে নিচ্ছেন না শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে ও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ কারণে তাঁরা স্ব-উদ্যোগে নিবন্ধন কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে করতে পারছেন না। ফলে জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের এসব শিশুদের করোনার টিকা সময়মতো নিতে না পারার শঙ্কায় ভুগছেন অভিভাবক মহল। শিক্ষা সচেতন মহলের দাবি বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সরকারকে বার্তা পাঠানোর দায়িত্ব শিক্ষা অফিসের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও পদক্ষেপ না নিতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ আগস্ট থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের এই টিকা নিতে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধন কে কীভাবে করবেন সে বিষয়টি গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর অভিভাবকদের কাছে এখনো পরিষ্কার না। তাঁরা মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এগুলো করে দেবেন।
শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধন করতে হবে অভিভাবকদের। শিক্ষকেরা কেবলমাত্র অভিভাবকদের নিবন্ধনের বিষয়টি জানিয়ে দেবেন। যা ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। একই সাথে শিক্ষা কর্মকর্তারা এইও বলছেন-এ বিষয়ে তাঁদের কাছে লিখিত কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন কাজ এখনো শুরু হয়নি। অন্যদিকে ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম ও কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শাখা এবং কওমি ও হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানেনই না তাঁদের টিকা দেয়া হবে কিনা। বা হলেও কীভাবে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, তাঁরা গ্রামে বসে বা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে টিকা নিয়েছেন। ফলে বাচ্চাদের কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে তা তাঁরা জানেন না। এসব কারণে তাঁরা এ বিষয়ে শিক্ষকদের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যশোরের ৮ উপজেলায় ১ হাজার ২৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৪১ জন। যাদের বয়স ১২ বছরের নিচেই।
এছাড়া জেলায় ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম ও কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শাখায় রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। একইভাবে জেলার ৮ উপজেলায় অসংখ্য কওমি ও হাফেজি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। এসব শিশু প্রথমে টিকার আওতায় ছিল না। সম্প্রতি ৫ বছর থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার বিষয়ে শিক্ষকদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। শিক্ষকদের বিষয়টি অভিভাবকদের জানাতে বলায় তাঁরা সেটি করেছেন। তবে বাস্তবতা হলো, প্রাথমিকের অধিকাংশ অভিভাবকের পক্ষে অ্যাপে ঢুকে নিবন্ধন করা অসম্ভব। তারা ঢুকতেই পারছেন না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আগেভাগে আসলে সবারই চাপ কমতো। দু-একজন অভিভাবক সুরক্ষা অ্যাপে ঢুকে নিবন্ধনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ তাঁদের সন্তানের ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন না থাকায় সফটওয়্যার কোনো কিছু নিচ্ছে না।
চৌগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা এখনো লিখিত কোনো নির্দেশনা পাননি। মৌখিকভাবে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে, অভিভাবকদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, ঠিক কবে থেকে তাঁদের ওখানে টিকা দেয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে রাখার জন্য জানিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, তাঁদের যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেভাবে শিক্ষকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
হতবাক হওয়ার বিষয় হলো-দায়িত্বশীল কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট জবাব মিলছে না। সবকিছুতেই যেন গা ছাড়াভাব। এনিয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় পড়েছেন অভিভাবক মহল।