শিরোনাম |
❒ শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপহার বিতরণ
জীবনে কোনদিন ভাবিনি এতো বড়ো বিল্ডিং এ কোন দিন উঠতে পারবো। এই ভিআইপি রুমের ভিআইপি চেয়ারে বসতে পারবো। ডিসি স্যারের সামনে চেয়ারে বসে কথা বরতে পারবো। সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এই জীবনে আর কোন চাওয়া নেই। এখন মরে গেলেও কোন দুঃখ থাকবে না। আমাদের সন্তানদের নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ডিসি স্যার সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। জীবনে যা ভাবিনি তাই আজ ডিসি স্যার আমাদের দিলেন। এর থেকে আর বড় কিচ্ছু হতে পারে না। আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন ডিসি স্যারকে সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু দান করেন।”
এক নাগাড়ে গড় গড় করে কথা গুলো বলছিলেন যশোর সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের ঋষিপল্লীর বাসিন্দা দেবকী দাস। তার সাথে ছিল ৬ বছরের শিশু সন্তান জয়ন্ত। দেবকীর মতো পদ্মা দাস,মিনা দাস,ঝুমা দাস, বলরাম দাস, অপু দাস, সবুজ দাস,মিঠু বিশ্বাস তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবনে প্রথম বারের মতো এসেছিলেন যশোরের ৩৬০ দরজা খ্যাত ব্রিটিশ ভারতের প্রথম কালেক্টরেট ভবনের এসি কনফারেন্স রুম অমিত্রাক্ষরে। একশো জনের ধারন ক্ষমতার এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভিআইপি রুমটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সত্যিই একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের স্বাক্ষী হতে পেরে মিডিয়ার কর্মীরাও ছিল আবেগাপ্লুত। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোন জেলা প্রশাসক ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার সভাকক্ষে বসার ব্যবস্থা করলেন, দিলেন দুহাত ভরে উপহার। সত্যিই এক ব্যতিক্রমী আয়োজনে মুগ্ধ ছিলো উপস্থিত সকলেই।
গতকালকের দিনটা ছিলো তাদের জন্য একটি অন্যরকম দিন। এদিন দুপুরের খাবার খেয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পরিধান করে ঋষি পাড়ার আরো বহু পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে দেবকী দাস এসেছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসকের আমন্ত্রনে কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভা কক্ষে।
শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে যশোরের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঋষি সম্প্রদায়ের সুবিধা বঞ্চিত পরিবারের সদস্যদের মাঝে নতুন পোষাক ও খাদ্য সামগ্রী উপহার দেওয়ার জন্যই আয়োজন করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, আজ একটি অন্যরকম দিন। ঋষি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সদস্যরা আমার মেহমান। তারা নানা ভাবে সমাজে বৈষম্যের শিকার। তাদের সাথে সমাজপতি, উচ্চ বংশীয়রা মিশতে চান না। তাদের নানাভাবে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। ঋষি (মুচি) বলে তাদেরকে ঘেন্না করা হয়। কিন্তু তারাও তো মানুষ্, তাদেরও এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার আছে। আনন্দ উৎসব উদযাপন করার অধিকার আছে। কিন্তু অর্থাভাবে ও সামাজিক ও ধর্মীয় নানা বাঁধার কারনে তারা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই কারনেই আজকের এই আয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্রে ও সমাজে সকল মানুষের সমান অধিকার আছে। কিন্তু সামান্য কিছু সুযোগ সুবিধার অভাবে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে ঠিক মতো আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। সেই বিষয়টি অনুভব করেই আমরা যশোরের জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ যৌথ ভাবে আসন্ন দূর্গাৎসবে ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের মুখে একটু হাঁসি ফোটানোর জন্যই আজকের এই প্রসায়। আপনারা আমার মেহমানদী গ্রহণ করে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। মনে রাখবেন এটা আপনাদের অধিকার। আমি বা আমরা কেবল উপলক্ষ্য মাত্র। যাতে করে তাদের ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ উচ্ছ্বাসে যেন ভাটা না পড়ে।
পরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামানসহ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকতৃারা মিলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেহমানদের হাতে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন পোষাক ও খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে তুলে দেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এম শাহিন আহমেদ, এডিসি শিক্ষা খালেদা খানম রেখা, এডিসি রেভিনিউ সুজন সরকার, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাহির দেওয়ান আমিন ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যশোর সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামে প্রায় ২শ’ ঋষি সম্প্রদায়ের পরিবারের বসবাস। অভাব অনটনের কারনে এসব পরিবারে প্রতি বছর তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার কোন আয়োজন বা উৎসব উদ্দীপনার ব্যবস্থা থাকে না। নিচু জাতের মানুষ বলে এদের সনাতন সমাজের উচ্চবিত্ত বা উচ্চ বংশীয়রা তেমন মর্যাদা দেয় না। তাদের কোন মন্দিরেও এদের প্রবেশাধিকার থাকে না। এরা সর্বদা অবহেলিত। অনেকে এদের দলিলত বলেও ঘেন্না করে। এদের অনেকের পরিবারে দিন আনে দিন খায় অবস্থা। তারপর দ্রব্যমুল্যের এই উর্ধ্বগতি। সব কিছু মিলে এবারের আসন্ন দুর্গা পূজার আনন্দ উৎসব ছিলো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন সুপ্রভাতের নির্বাহী পরিচালক নার্গিস ইয়াসমিন গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের দৃষ্টিতে নিয়ে আসলে তিনি তাৎক্ষনিক ওই সম্প্রদায়ের ২শ’ পরিবারের সদস্যদের মাঝে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে বিতরণ করার উদ্যোগ নেন।