শিরোনাম |
❒ লিবিয়ায় পাচারচক্রের কবল থেকে মুক্ত যশোরের সালাম
❒ মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী
লিবিয়ায় পাচারের শিকার যশোরের আব্দুস সালাম (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার খলসি গ্রামের মৃত সৈয়দ তোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। পিবিআই যশোর ইউনিটের নানামুখী তৎপরতায় পাচারকারী সালামকে দেশে ফেরত পাঠায়। এর মধ্যদিয়ে যশোর পিবিআই’র ঝুলিতে উঠলো আরও একটি বড় সাফল্যঅ
আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে যশোরের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, সৈয়দ আব্দুস সালামকে পাচারের মামলাটি আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন ভিকটিম সালাম লিবিয়াতে আটকে আছেন। তখন বিদেশে থাকা মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য আসামি নওয়াব আলী সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে নওয়াব আলী ভিডিও কলে ভিকটিম সালামের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার কথা বলিয়ে দেন। এ সময় সালামকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পাচারকারীকে চাপ দেন। সবশেষ পিবিআই যশোরের প্রচেষ্টায় সালাম দেশে ফেরত আসেন।
তাকে জবানবন্দি দেয়ার জন্য রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আব্দুস সালাম পেশায় একজন কৃষক। পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য তিনি বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিবেশী নওয়াব আলী বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমকে রোমানিয়ায় পাঠাতে পারবে বলে জানায়। তখন সালাম পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে রোমানিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে নওয়াব আলী জানান তাকে রোমানিয়া না, ইটালি পাঠাতে পারবেন। তখন নওয়াব আলীর সঙ্গে চার লাখ টাকায় চুক্তি করেন সালাম।
এরপর টাকা নিয়ে ভিকটিমকে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই নিয়ে যান নওয়াব আলী। সেখানে দুদিন অবস্থান করার পর মিশরে পাঁচ ঘণ্টা বিরতির পর লিবিয়া নিয়ে একটি বাসায় আটক রাখেন। সেখান থেকে ২০-২২ দিন পর নওয়াব আলী ভিকটিমকে ইটালি পাঠানোর জন্য অপরিচিত কিছু লোকের কাছে পাঠায়। তখন তারা আসামি নাদিম ও হাসানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন ভিকটিমকে। ভিকটিম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে আসামিরা ভিকটিমে একটি অজ্ঞাতস্থানে আটকে রাখেন।
আটক রেখে আসামিরা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এভাবে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১৫ লাখ টাকা আদায় করে। এরপরও তারা ভিকটিমকে মুক্ত করে দেয়নি। তখন তার পরিবারের লোকজন বুঝতে পারে ভিকটিম কোনো মানবপাচার চক্রের হাতে জিম্মি। তাকে উদ্ধারের জন্য ২০২৪ সালের ২ মে আদালতে মানবপাচার মামলা করেন তারা। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে। এরপর পিবিআই তদন্তের এক পর্যায়ে ভিকটিমকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।