শিরোনাম |
❒ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি বরগুনার আম-জনতার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে পিটিয়ে হত্যার শিকার তোফাজ্জল হোসেনের জানাজায় উঠল বিচারের দাবি। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বরগুনায় পাথরঘাটা উপজেলায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এরআগে স্থানীয় কাঁঠালতলী তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা মাঠে জানাজা হয়।
এলাকাবাসী ও স্বজনরা এই হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে চরদুয়ানি বাজারে মানববন্ধনও করেন।
“যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর, কীভাবে নির্যাতন করলে একটা ছেলের পায়ের গোশত খসে পড়তে পারে, কীভাবে রক্তাক্ত হতে পারে! তোরা শিক্ষিত হয়েছিস কিন্তু মানুষ হস নাই।” |
তোফাজ্জলের শেষ শয্যা হয়েছে তার মা-বাবা ও ভাইয়ের কবরের পাশে। ৮ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা, ৫ বছর আগে মা এবং গত বছরের রোজায় ভাইকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ ছিলেন তোফাজ্জল।
তোফাজ্জল স্কুল জীবন থেকেই খুব মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের ছিলেন বলে জানান তার স্কুলশিক্ষক মিলন মিয়া।
তিনি বলেন, “তাকে কখনই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলতেন। আমরা এ মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
“দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে এমন নৃশংস একটা ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারি না। ও চুরি করেনি, তবু যদি করেও থাকত এ জন্য আইন রয়েছে। সামান্য কয়েক টাকার মোবাইলের জন্য একটা জীবনকে এভাবে চলে যেতে হবে তা মানা যায় না।”
সকালে তোফাজ্জলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
তোফাজ্জলের জানাজা পড়ান ঈমান মাওলানা খলিলুর রহমান। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাবা মারা গেল, মা মারা গেল। কিন্তু আমার কাছে বড় আশ্চর্য লাগতাছে, তার মা-বাবার জানাজা আমিই পড়াইছিলাম। কিন্তু তোফাজ্জলের জানাজা আমাকে পড়াতে হবে সে কথা বুঝি নাই। জেনেছিলাম তোফাজ্জল আমার জানাজায় শরিক হবে।
'ও পাগল', ফোনে মামাত বোনের আকুতি শুনেও তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন “যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর, কীভাবে নির্যাতন করলে একটা ছেলের পায়ের গোশত খসে পড়তে পারে, কীভাবে রক্তাক্ত হতে পারে। আমার মনে পড়ে, তোরা শিক্ষিত হয়েছিস কিন্তু মানুষ হস নাই। জানোয়ারই রয়ে গেলি।”
স্বজনরা জানান, তোফাজ্জলের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। তার মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর অল্প দিনের ব্যবধানে মারা যান।
পরিবারের সবাইকে হারিয়ে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া তোফাজ্জল দুই থেকে তিন বছর ধরে প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। এলাকার যারা তাকে চিনত সবাই সহযোগিতা করতেন।
ক্যাম্পাসে পরিচিত কাউকে দেখলেই দৌড়ে গিয়ে কুশল বিনিময় করতেন। পরিচিতরা ওকে দেখলে খাবার কিনে দিতেন কিংবা খাওয়ার জন্য টাকা দিতেন। তোফাজ্জল মাঝে মধ্যে টাকা চেয়েও নিতেন।
গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন তোফাজ্জল। রাতে কোনো এক সময় ঢুকে পড়েন ফজলুল হক হলে। মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে সেই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্র তাকে আটক করে জেরা করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়। পরে দলবেঁধে পেটানো হয় ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে। সঙ্গে চলতে থাকে কিল ঘুষি। পিটুনির একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয়জন।