শিরোনাম |
❒ চরম দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন কয়েক হাজার পরিবার,মেলেনি আর্থিক সহায়তা
যশোরের অভয়নগরে এবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ২৫ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন। এসব মানুষের বেঁচে থাকার মতো এগিয়ে যায়নি কোনো ত্রাণ দাতা। সরকারি সহায়তাও পাননি এসব মানুষ। নিরুপায় হয়ে কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে জীবন রক্ষার যুদ্ধ করছেন। তাদের মাছের ঘের ভেসে গেছে। পানির নিচেই তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে যাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
পাউবো ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর ও খুলনার ফুলতলা এবং ডুমুরিয়া উপজেলার পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৬৮ সালে ভবদহে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয়। পরে টেকা, পশুর ও শ্রীহরি নদীর নব্যতা কমে যাওয়ায় ১৯৮৫ সাল থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শুরু হয় এ অঞ্চলে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকার উদ্যোগ নিলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। যে কারণে টানা বৃষ্টিপাত হলে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বসতবাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব পরিবারের মানুষ। গবাদিপশু ও মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করছে। উপজেলা কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভীটা, সরখোলা, ডুমুরতলা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহটী, বাড়েধা, দীঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গী, বারান্দিসহ ২৫ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।
সুন্দলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নের বিল সংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েক’শ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা বা ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে দেখা যায়নি।
চলিশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান জানান, জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমার ইউনিয়ন। তবে মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা।
পায়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান আত্মগোপনে থাকায় সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। কী পরিমাণ ফসলি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে তিন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ৫৯০ হেক্টরসহ ৩৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেটে ৪টি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।