মঙ্গলবার , ৫ নভেম্বর ২০২৪ , ২০ কার্তিক ১৪৩১
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ মাদারীপুরের ৩ জনের মৃত্যু খবরের পর এবার এলো নরসিংদীর দুঃসংবাদ

ছাত্রলীগ নেতাসহ দু’জনের পরিবারে শোকের মাতম
প্রকাশ : শুক্রবার, ২১ জুন , ২০২৪, ০১:১৬:০০ এ এম
স্বর্ণলতা ডেস্ক:
Shornolota_2024-06-21_66748179a7c0f.png

মাদারীপুরের ৩ জনের মৃত্যু সংবাদের পর এবার এলো নরসিংদীর রায়পুরার দুই যুবকের স্বপ্ন নৌকাডুবিতে ভেসে যাওয়ার খবর। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে তাদের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন-রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর নগর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে ইসতিয়াক হাসান ইমরান (৩২)। নিহত ইমরান ওই ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে উপজেলার চান্দেরকান্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী ওসমান মিয়ার ছেলে ফয়সাল আবেদিন (২৩)।


বৃহস্পতিবার (২০ জুন) উপজেলার মুছাপুর ও চান্দেরকান্দি ইউনিয়নে নিহতের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) ইতালির দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন ইমরান। এতে তিনিসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুসহ আরও ৬০ জন নিখোঁজ আছেন। গত ১৮ দিন আগে সাগর পথে ইতালি রওনা দেন ফয়সাল আবেদিন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান তার পরিবার।


নিহত ইসতিয়াক হাসান ইমরানের মৃত্যুর সংবাদটি তাঁর ভাই আরমান আহমেদকে মোবাইল ফোনে জানান দালাল রাজিব মিয়া। দালালের বরাত দিয়ে আরমান বলেন, ‘ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচে ইমরানসহ ১২ জন ছিলেন। ইতালির উপকূলে প্রবেশের পর তেলের ট্যাংক বিস্ফোরণ হলে নৌকার ভেতরে পানি ঢুকে যায়। ওই সময় বাইরে থেকে পাটাতন আটকানো ছিল। সেখানে স্ট্রোক করে ইমরানের মৃত্যু হয়। নৌকাটিতে তখন ৬২ অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন।’


আরমান আরও জানান, লিবিয়া প্রবাসী দালাল রাজিব মিয়ার সঙ্গে ইমরানের ১৫ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়েছিল। সাগর পথে বিদেশ যাত্রায় বিরোধী ছিল তার পরিবার। কিন্তু ইমরানের জেদ ছিল সে ইতালি যাবে। লিবিয়ায় একটি ‘গেমঘরে’ দুই মাস বন্দী ছিল। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি দেওয়া হয়নি। শেষ গত ১৬ জুন তাঁর ভাইকে পাঠানো একটি খুদে বার্তায় ইমরান বলেন, ‘আজকে গেম দেওয়া হবে। বাবা-মাকে দোয়া করতে বলিস।’

অপরদিকে চান্দেরকান্দি ফয়সাল আবেদিনের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, তিনি রায়পুরা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করতেন। স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবেন। গত বছর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে উপজেলার বেগমাবাদ এলাকার লিবিয়া প্রবাসী রাকিব মিয়া নামে এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাড়ি জমান তিনি। চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া পৌঁছে দালালকে ছয় লাখ টাকা দেন ফয়সালের পরিবার। বাকি চার লাখ টাকা ইতালি পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে গতকাল বুধবার ফয়সাল আবেদিনের মৃত্যুর সংবাদটি ফোনে পরিবারকে জানান সৌদিপ্রবাসী তার এক নিকটাত্মীয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেই পোস্ট থেকে জানা যায়, লিবিয়ার বেনগাজী শহরের তলময়দা সাগর তীরে দুটি লাশ ভেসে আসে। এর মধ্যে একজনরে পাসপোর্ট উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। উদ্ধার হওয়া ওই পাসপোর্টটি ছিল ফয়সাল আবেদিনের। তাঁর লাশ বর্তমানে স্থানীয় আল মারজা হাসপাতাল মর্গে আছে।

ফয়সাল আবেদিনের মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার কথা বলে দালালের মাধ্যমে দুবাই গিয়ে আমাকে ফোন দেয় ফয়সাল। ইতালি নেওয়ার ব্যাপারে দালাল রাকিব আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি। গত ১৮ দিন আগে ফয়সাল ফোনে জানায়, সে ইতালি রওয়া দিচ্ছে। এরপর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফয়সালের মৃত্যুর সংবাদটি মিথ্যা বলে দাবি করেন লিবিয়া প্রবাসী সিফাত নামে এক ব্যক্তি। বুধবার দুপুরে ফয়সালের চাচা মুজিবর রহমানের সঙ্গে ফোনে আলাপের সময় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনার ভাতিজা গ্রিসে আছে। পরে যোগাযোগ করবে।’ ভাতিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করেন মুজিবর। সিফাত বলেন, ‘বিকেলে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজিব মিয়া ও রাকিব মিয়া নামে দুই দালাল দীর্ঘ দিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছেন। সাগর পথে ইতালি পাঠাতে অভিবাসনপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন দালাল চক্রটি। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইতালি পাঠানো আগে লিবিয়ার গেম করে বন্দী করে রাখা হয়। সেখানে তাদের দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার ও পানি। টাকা আদায় শেষ হলে নৌকায় করে সাগর পথে পাঠানো হতো ইতালি। অনিরাপদ যাত্রায় সাগরে ডুবে অনেক মারা গেলেও থামেনি তাদের কার্যক্রম। রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগরের বাসিন্দা রাজিব মিয়া। দেশে তার বৃদ্ধ বাবা-মা থাকলেও তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই রাজিবের। একই উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিব মিয়া। তিনিও ইতালি লোক পাঠান। তাদের কথা মতো দেশে থাকা পরিবার ও প্রতিনিধিদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন ইতালিতে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ইসতিয়াক হাসান ইমরান মুছাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এমন মৃত্যু কাম্য নয়। অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার ব্যাপারে সকলকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’


রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, এ ব্যাপারে নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হাসান জানান, সাগরপথে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে-এমন তথ্য জানা নেই। তবে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিহত ইসতিয়াক হাসান ইমরান ও ফয়সাল আবেদিনের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান দুই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও স্বজনসহ স্থানীয়রা।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝